Breaking News

ওসির অহংকারী মেয়ে । পর্ব -১৭ এবং শেষ



আকাশের ভিতরে ক্ষোভ জন্ম নিয়ে নিয়েছে,সে আরুর বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে,

আরু তুই খালি ওয়েট কর,তুই আমার জীবনের সুন্দর দিন গুলো নষ্ট করেছিস,

আমার জীবন থেকে সুখ কেঁড়ে নিতে চেয়েছিস,এবার আমি তোর রুহুটাই শরীর থেকে বের করে ফেলবো...

আকাশ,হেনাকে ছেড়ে দিয়ে ওকে কোলে তুলে নেয়,চলো আমার সাথে,
আজকের পর তোমাকে এক মিনিটের জন্যেও চোখ থেকে আড়াল করবো না..
--আকাশ,হেনাকে কোলে করে নিয়েই রুম থেকে বের হয়,হেনাও আকাশকে জড়িয়ে ধরে
ওর কোলের মধ্যে ছোট বাচ্চার জড়োসড়ো হয়ে আছে,
আকাশ রুম থেকে বের হতেই হেনার বাবা আকাশের পায়ে পড়ে যায়..
--ভাই আপনি আমার মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
ভাই আপনার পায়ে পড়ি,আমার মেয়েটার কিছু করবেন না,ওর কিছু হলে আমরা মরে যাবো...
আকাশ,এই ওসি একদম চুপ,আমার বউকে আমি নিয়ে যাচ্ছি,হেনাকে আমি আর এক
সেকেন্ডের জন্যেও নিজের থেকে আড়াল করবো না,ওকে আমি বিয়ে
করে সারাজীবন আমার বাসার বউ করে রেখে দিব,অনেক সাধনার পর ওকে আমি ফিরে পেয়েছি..
--হেনার আব্বু,আকাশের পা ছেড়ে দেয়,কারন তিনি কিছু একটা লক্ষ্য করেছে,
আকাশ কথা বলার সময় তার চোখের মধ্যে পানি টলমল করছিলো,
তিনি বুঝে গেছেন যে আকাশের মত ভালো আর কেউ বাসতে পারবে না হেনাকে,
সে নিজের জীবন দিয়ে হলেও হেনাকে রক্ষা করবে,
.
আকাশ,হেনাকে কোলে করে নিয়েই ঘর থেকে বের হয়ে পড়ে,
পরে সিএনজি একটা ঠিক করে সোজা হোটেলে চলে যায়,
আর যাদের সাথে মিটাপ করেছিলো,তাদেরকে সে থানার সামনে থেকেই বিদায় করে দেয়,
কারন হেনার বাসায় সবাইকে নিয়ে আসা সম্ভব না,হোটেলে পৌঁছেও হেনাকে সে কোল
থেকে নামায় না,হোটেলের সবাই তো মুচকি মুচকি হাসছে আকাশের অবস্থা দেখে,
কিন্তু আকাশের এতে কিচ্ছু আসে যায় না,সে তার বউকে কোলে উঠিয়েছে....
--হেনাকে কোলে করে নিয়ে নিজের রুমে যায়,নুসরাত তো আকাশকে দেখে অবাক,
কারন তার কোলের মধ্যে মেয়েটা কে,
নুসরাত,স্যার মেয়েটা কে?
আকাশ,তোমাদের ভাবি...
নুসরাত,ভেবাচেকা খেয়ে যায় আকাশের কথা শুনে,স্যার ভাবি মানে?
আকাশ,ভাবি মানে ভাবি,আজ কালের মধ্যে আমার বিয়ে করবো😊
নুসরাতের তো মাথায় ঢুকতেছে না,আকাশ হুট করে কাকে ধরে নিয়ে এসে ভাবি বলছে🤔
আকাশ,নুসরাত সব গুছিয়ে নাও আজকেই আমরা ফিরে যাচ্ছি,
তারপর আকাশ তিনটা টিকেট কনফার্ম করে,সেদিন এই আকাশ হেনাকে নিয়ে ওর শহরে ফিরে যায়,আকাশের বাসার সবাই তো অবাক হেনাকে দেখে,যদিও অবশ্য তারা আগে কখনো হেনাকে দেখে নি,কিন্তু আকাশ তাদেরকে ছবি দেখিয়েছিলো....
--আকাশের আম্মু,আকাশ হেনা না মরে গিয়েছে?
তাহলে সে ফিরে আসলো কি করে?
আকাশ,আম্মু তার পিছনে অনেক লম্বা ইতিহাস,এমন সময় আকাশের আব্বু আসে,
--কিসের ইতিহাস?
.
আকাশ,তারপর সমস্ত কিছু খুলে বলে,আকাশের আব্বু তো শুনে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়,কিহহহ জাফর ইকবালের মেয়ে এমন কাজ করেছে,ওয়েট দ্বারা আমি খবর লাগাচ্ছি,ওদের বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে দিব,
আকাশ,না বাবা প্লিজ তুমি এমন কিছুই করো না,যা করার আমি করছি,সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে,আমার প্রতিশোধ আমিই নিব,আর তোমরা বিয়ের ব্যবস্থা করো!
আকাশের আব্বু,ওকেহ তোর যেমনটা ভালো লাগে সেটাই কর,
আকাশ,লোক লাগিয়ে দেয় জাফর ইকবাল সাহেবের বাড়ির খোজ নিতে,
একটু পর খবরি ফোন দিয়ে জাফর ইকবাল সাহেবের বাড়ির সমস্ত ডিটেইলস দেয়,আরু যেই বাসাটা দেখিয়েছিলো আগে,সেটা যদি হতো তাহলে সে মিনিটের মধ্যেই আরুক বের করে ফেলতো,কিন্তু আরু তো সেই শহর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে....
আকাশ,হেনা তুমি থাকো আমি একটু আসছি,সে ল্যাম্বারঘিনিটা নিয়ে টান দিয়ে সোজা জাফর ইকবাল সাহেবের বাড়িতে চলে যায়,সেখানে গিয়ে দেখতে পায়,একটা বয়স্ক মহিলা বাড়িতে,এই যে আন্টি আরু কোথায়?
--বাবা তুমি কে আরুর বন্ধু হয়তো,ওহ তুমি কি ওকে দেখতে এসেছো?
কিন্তু সে তো এখানে নাই...
আকাশ,মানে? তাহলে সে কোথায়?
.
--কেন বাবা তুমি জানো না,
সে যে আজ একমাস যাবৎ ব্লাড ক্যান্সার হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঙ্গা নড়ছে?
আকাশের তো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়,আন্টি কি বলছেন আপনি?
-- হা বাবা,আজ একমাস ধরে আমার মেয়েটা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা নড়ছে,
জানিনা কার বদদোয়া লেগে এমন হয়েছে,কোন পাপের ফল সে ভোগ করছে,
বাবা জানো আমার মেয়েটা ছাড়া আমার আর কেউ নাই,ছোট মেয়েটা থেকেও না
থাকার মত,সে নিজকে সামলাতে কষ্ট হয়ে যায়,আমাকে সামলাবে কি করে,
উনি বলতে বলতেই কান্না করে দেয়...
.
আকাশের চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরছে,আরুর উপর
থেকে সমস্ত রাগ মিনিটের মধ্যেই উধাও হয়ে যায়,আর সে বুঝতে পারে বয়স্ক মহিলাটাই আরুর
আম্মু,আন্টি আপনি প্লিজ কান্না করবেন না,আরুর কিচ্ছু হবে না,
যত ভালো চিকিৎসা লাগে আমি ওকে করাবো,ওর কিচ্ছুই হবে না,
আপনার মেয়েকে আমি আপনার কোলে ফিরিয়ে দিব,
আকাশ,আরুর আম্মুর থেকে ঠিকানা নিয়ে হসপিটালে চলে যায়,
সেখানে গিয়ে দেখে আরু একটা বেডের উপরে শুয়ে আছে,ওর মুখে মাক্স লাগানো,
তার কেবিনের বাহিরে লিখা ভিতরে প্রবেশ নিষেধ,
তাও আকাশ ডাক্তার থেকে অনেক কষ্টে অনুমতি নিয়ে কেবিনের ভিতের যায়,
আরুকে দেখে আকাশের বুক ফেটে কান্না আসছে,আকাশ আরুকে ডাক দেয়,এই আরু উঠ?
দেখ আমি এসে গেছি,দেখ তোর বন্ধু আকাশ এসে গেছে,
কিন্তু আরুর কোনো সারা শব্দ নাই,এই আরু তুই কি আমার সাথে কথা বলবি না
,সেই যে আমাকে ছেড়ে চলে এসেছিস,তারপর তোর আর কোনো খোঁজ এই পায়নি রে আমি...
আরু,আস্তে আস্তে চোখ মেলার চেষ্টা করছে,সে চোখ খুলে দেখে আকাশ তার সামনে বসে আছে,
আরুর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে,আরু আকাশকে ঈশারায় বলে মুখ থেকে মাক্সটা খুলে দিতে,আকাশ তাই করে,মুখ থেকে মাক্সটা খুলে দেয়...
.
--আকাশ তুই এসেছিস?
আমি জানতাম তুই আসবি,কারন তোকে না দেখলে
যে আমি মৃত্যুর স্বাদ কখনোই ভোগ করতে পারবো না,
তোকে যে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি,বিধাতা যে তোর কাছে মাফ না চাইয়ে
আমাকে মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করাবে না,আকাশ প্লিজ আমায় মাফ করে দিস রে?
তোর জীবন থেকে সুন্দর সময় গুলো আমি কেঁড়ে নিয়েছি,তোর ভালোবাসার মানুষটা
যে আমার জন্য নিজেকে শেষ করে দিয়েছে,পাপ করতে করতে পাপের
বোঝা ভাড়ি করে ফেলেছি আমি,বাবার মৃত্যুর জন্য তোদেরকে দায়ী করে
তোর জীবন থেকে শান্তি নামক বস্তুটা কেঁড়ে নিয়েছি,
কিন্তু বিশ্বাস কর এখন উপলব্ধি করতে পারছি,যে কারোর মৃত্যুর জন্য
কেউ দায়ী থাকে না,উপর ওয়ালার যখন হুকুম থাকে তখনি তার মৃত্যু হয়,আমি
জানি না তোর কাছে কি ভাবে মাফ চাইলে তুই আমাকে ক্ষমা করবি,
কিন্তু বিশ্বাস কর তুই যদি আমায় মাফ না করিস,তাহলে উপরে গিয়েও শান্তি পাবো না🙂
আকাশ,এই পাগলি মেয়ে এই সব কি বলছিস উল্টা-পাল্টা?
তোর উপরে আমার কোনো রাগ এই নাই,আমি সমস্ত কিছু ভুলে গিয়েছি,আর হেনা মরেনি,সে ফিরে এসেছে,সে তোর কথায় আমার থেকে দূরে সরে গিয়েছে এমন একটা নাটক করে,আর এখন সমস্ত কথা বাদ,তোকে আগে সুস্থ হতে হবে...
আরু,আকাশ আমার হাতে যে আর সময় নাই রে,সুস্থ হয়েও কি করবো?
আকাশ,এই মেয়ে একদম চুপ,তোর কিচ্ছু হবে না,তোর কিচ্ছু হতে পারে না,আমি তোকে বাহিরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করবো,
.
আরু,আকাশ প্লিজ এমনটা করিস না,কোনো লাভ হবে না এতে,উল্টো বরো তোর খরচ হবে...
আকাশ,আরু একদম চুপ থাকতে বলেছি তোকে,আর একটা কথাও বলবি না তুই,আকাশ সাথে সাথে ওর বাবাকে ফোন করে,বাবা আজকেই ইন্ডিয়ার তিনটা টিকিট কাটো তো বিমানের?
--কেন তুই ইন্ডিয়ার টিকিট দিয়ে কি করবি?
আকাশ,বাবা হাতে এত সময় নেই,বেশি কিছু বলতে পারবো না,সময় হলে সব বলবো,হেনাকে রেডি থাকতে বলো,আমি এসে ওকে নিয়েই রওনা দিব...
--আচ্ছা আমি টিকেট কেটে রাখছি,আর হেনাকেও বলছি,
আকাশের আব্বু তৎক্ষনাৎ তিনটা টিকেট কেটে রাখে ইন্ডিয়ার,
আকাশ,আরুকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে ছাড়িয়ে নিয়ে ওর সাথে করে বাসায় নিয়ে যায়,পরে বাসা থেকে হেনাকে সাথে নিয়ে ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্য ফ্লাইটে করে রওনা দেয়,আরুকে মাদ্রাজ নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাবে
আকাশ,সেখানে যাওয়ার পর সেখানকার ডাক্তাররা বলে যে অনেক দেরি হয়ে গেছে,তবে শেষ একটা চিকিৎসা করা যেতে পারে,যদি ৪ সাপ্তাহ ডায়ালাইসিস করানো যায় তাহলে রুগি সুস্থ হয়ে যাবে,আর যদি এর আগে কিছু হয়ে যায় সেটা উপর ওয়ালা জানেন...
আকাশ,নাহ তাহলে সেটাই করান,আরুকে ডায়ালাইসিস করানো হয়,এভাবে পর,পর চারবার ডায়ালাইসিস করানো হয়,কিন্তু আরুরু কিচ্ছুই হয় নি আল্লাহর রহমতে,বরং সে মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠেছে,আকাশ আরুকে নিয়ে দেশে ফিরে,আরু এখন মোটামুটি সুস্থ,
আরু হেনা থেকে মাফ চেয়ে নেয়,প্লিজ হেনা আমায় মাফ করে দিস,আমি যাদের ক্ষতি করেছি,তারাই আমার জীবন বাঁচিয়েছে..😓
হেনা,এই আরু পাগলামো কেন করছিস,তুই জানিস না বন্ধুদের মধ্যে সরি টরি এসব কিছুই চলে না...
শোন আমি সব ভুলে গিয়েছি,এখন থেকে তুই আমার বান্ধবী না খালি,তুই আমার বোন ও,সো মাফ টাফ ভুলেও চাইবি না গরম হয়ে😡
আরু, আচ্ছা😁
.
--দেশে আসার কিছুদিন পর আকাশের আব্বু-আম্মু আকাশের আর হেনার বিয়ের ডেট ফিক্সড করে,
তারপর ওদের বিয়ে হয়ে যায়,আকাশের আর হেনার বিয়ের সমস্ত কিছু আরুই প্লানিং করে,কি ভাবে কি করবে,
তিনজন একটা পরিবারের মত হয়ে গিয়েছে,
আজ আকাশ আর হেনার বিয়ে হয়েছে এক বছর হতে চললো,
হেনা মা হতে চলেছে,সবাই তো মহাখুশি,বিশেষ করে আকাশের
বাবা -মা,যে তাদের বংশের প্রদীপ আসতে চলেছে,হেনার বাবা-মাও এসেছে হেনাকে দেখতে,
আকাশের কেন জানি হেনার বাবার প্রতি অন্য রকম একটা ঘৃণা কাজ করে,
কারন লোকটার আগের চরিত্রের কথা এখনো সে ভুলতে পারেনি,
তাও সমস্ত কিছু ভুলে আপন করে নিয়েছে,সেটা করতো না অবশ্য,
সেটা করেছি খালি একমাত্র হেনার মুখের দিকে চেয়ে,
আরু তো মহাখুশি যে হেনার বেবি হতে চলেছে,
এই হেনা তোর তো ছেলে হবে তুই জানিস?
হেনা,আরু তুই কি করে জানলি রে?🤔
আরু,কারন আমার তো বিএফ নাই বর ও নাই😒
তাই তোর ছেলে হবে,আর আমি তোর ছেলের সাথে চুটিয়ে প্রেম করবো😁
হেনা,আল্লাহরে আল্লাহ😲
শয়তানকেও হাড় মানাবি তুই😂
এমন সময় আকাশ অফিস শেষ করে বাড়ি ফিরে,
এই যে দুইজনের মধ্যে কি ফুসুরফাসুর চলছে শুনি?🤔
হেনা,শুনবা কি ফুসুরফাসুর চলছে,এমন সময় আরু হেনার মুখ চেপে ধরে,এই হেনা প্লিজ বোন না আমার বলিস না🥺
হেনা,মুখ থেকে আরুর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে,এই যে আমার নাকি ছেলে হবে,আর তার সাথে আরু নাকি চুটিয়ে প্রেম করেব,ওর নাকি কেউ নাই😀
আকাশ,ওহহহ এই কথা😲
দ্বারা বদমাইশ মেয়ে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করছি,
এভাবেই হাসিখুশি ভাবে চলতে থাকে দিনকাল,
কিছুদিন পর আরুর বিয়ের দিন তারিখ পাকা হয়,
পাঠক ভাইরা আপনারা সবাই আইসেন কেমন?
এভার ভাগেন 😐

<>সমাপ্ত<>

No comments