Breaking News

ওসির অহংকারী মেয়ে । পর্ব -১৪

আকাশ একদিন রাতের বেলায় কান্না করতে করতে ফ্লোরের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে,

সকাল বেলা কারোর স্পর্শে ঘুম ভাঙ্গে,সে অনুভব করে কেউ একজন তাকে জড়িয়ে ধরে তার উষ্ণ ঠোঁট জোড়া দিয়ে চুমু খাচ্ছে,আর নরম সুরে বলছে এই আকাশ আর কত ঘুমাবে?
আকাশ মিটমিট করে চোখ খুলে দেখে হেনা,আকাশ লাফিয়ে শোয়া থেকে উঠে পরে,কলিজা তুমি এসে গেছো....?
আমি জানতাম তুমি আসবে,আমার কলিজা আমায় রেখে কখনো মরতে পারে না,আকাশ দুইহাত দিয়ে হেনাকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে...
হেনা,কলিজা কি হাল করেছো তুমি নিজের?
আমি তোমায় রেখে কি ভাবে মরতে পারি বলো...
আমি জানি তুমি আমায় খুব ভালোবাসো,আমি যদি মরে যাই তাহলে যে আমার কলিজাটাও ভালো থাকবে না....
এমন সময় আকাশের আম্মু আকাশের রুমে আসে,
আকাশ,ওর আম্মুকে দেখে আম্মু হেনা ফিরে এসেছে আমার কাছে..
-আকাশের আম্মু,হেনাকে দেখে কুঁকড়ে কান্না করে দেয়...
কারন আকাশ একটা বালিশকে আঁকড়ে ধরে আছে নিজের শরীরের সাথে,আর বালিশের সাথে নিজে নিজেই পাগলের মত বকবক করছে,সে যেটাকে হেনা বলে দাবি করছে সেটা হেনা না,সেটা একটা বালিশ...
আকাশ,পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে,সে উঠতে বসতে হেনাকে দেখতে পায়,ঘরের দেওয়ালের সমস্ত জায়গায় হেনার নাম লিখে ভরে ফেলেছে,আকাশ আজ ছয়মাস ঘর থেকে বের হয় না,খাওয়া দাওয়াও ঠিক মত করে না,ওর আম্মু ওকে অনেক কষ্টে খাবার খাওয়ায় যে খাবার খেলে হেনাকে এনে দিবে...
--আকাশের আম্মু,বাবা আর কত এভাবে পাগলামি করবি বল?
এখানে হেনা নাই,তুই যাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আছিস সেটা একটা বালিশ...😓
আকাশ,এই আম্মু তুমি বেশি জানো,আমি বলেছি না এটা আমার হেনা,আর তাও সে আমার সামনে বসে আছে...
--আকাশের আম্মু,আচ্ছা যা ঠিক আছে এটা তোর হেনা,বাবা এবার চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়..
আকাশ,নাহ আমি ঘুমাবো না,আমি সারারাত হেনার সাথে গল্প করবো,
--আকাশের আম্মু,আকাশ এখন কিন্তু ভালো হবে না,আমি কিন্তু হেনাকে চলে যেতে বলবো,
আকাশ,নাহ প্লিজ আম্মু এটা করবে না,আমি ঘুম যাচ্ছি,আকাশ বালিশটাকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে পড়ে,আর অন্যদিকে আকাশের আম্মু চোখ দিয়ে পানি ঝরাতে ঝরাতে রুম থেকে বের হয়,তিনার কত সুন্দর সুস্থ সবল ছেলেটা কি হয়ে গেলো,ছেলের এই অবস্থা যেনো তার কলিজাটা একদম ছিদ্র করে দিচ্ছে,তিনি রুমে গিয়ে আওয়াজ করে কান্না করে দেয়,আকাশের আব্বুও পাশে বসা,তিনিও কান্না করছেন,
--এই আকাশের আব্বু আমাদের ছেলে কি আর কখনো ঠিক হবে না?আমার ছেলের এই অবস্থা দেখে আমার কলিজা যে সইছে না,
প্লিজ তুমি আমার ছেলেকে ঠিক করে দাও,আমার ছেলেকে আমি আবার আগের রূপে দেখতে চাই!
--আকাশের বাবা,আমারো যে ক্ষমতা নেই কিছু করার,সমস্ত কিছুই যে উপর ওয়ালার হাতে,তবে আমি বান্দা হয়ে একটা চেষ্টা করতে পারি,কাল আমি সেটা করবো...
--আমি জানি না তুমি কি করবে,কিন্তু আমার ছেলে সুস্থ হওয়া চাই,
পরেরদিন সাকল বেলা,আকাশের আব্বু ওকে সেলুনের দোকানে নিয়ে যায়,ওর দাঁড়ি,গোঁফ গুলো কাটানোর জন্য,আকাশের দাঁড়ি,গোঁফ না কাটার কারনে ইয়া বড় বড় হয়ে গেছে,সে তো কোন মতেই রুম থেকে বের হবে না,তাও আকাশের আব্বু ওকে ফুঁসিয়ে ফাঁসিয়ে নিয়ে যায়,যে হেনাকে এনে দিবে বলে...
--দাঁড়ি গোঁফ কাটার পর আকাশ নিজেকেই চিনতে পারছে না,
সে কেমন ছিলো আর এখন তাকে কত স্মার্ট লাগছে,সে নিজের মুখমণ্ডল বারবার হাত বুলিয়ে দেখছে,
দাঁড়ি,গোঁফ কাটার পর আকাশের বাবা আকাশকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়,ঘুরার কারনে যদি তার মাইন্ড ফ্রেশ হয়,আকাশকে নিয়ে একটা পার্কে যায়,যেখানে আকাশ ছোটকালে আসার জন্য খুব বায়না করতো,
--বাবা তোর মনে আছে,তুই ছোট কালে এখানে আসার জন্য কত বায়না করতি?
আকাশ,হা বাবা,আর আমি জানি তুমি আমায় এখানে কেন নিয়ে এসেছো,কারন যাতে আমার মাইন্ড ফ্রেশ হয়,শুনো আব্বু তার কোনো প্রয়োজন নেই,আমি ঠিক আছি,আমি নিজেই চাইতাম না দুনিয়ার রংমহল দেখি,হেনা চলে যাওয়ার পর ইচ্ছা করেই নিজেকে চার দেওয়ালের মাঝে বন্দী করে রেখেছি,কারন আমার হৈ -হল্লোড় সব হেনার মৃত্যুর সাথে কবরে দাফন হয়ে গিয়েছে,দুনিয়া যেনো আমার কাছে বিষের মত মনে হচ্ছিলো,তাই নিজেকে কষ্ট দিয়েছি এতদিন,আমার জন্যই সে এমনটা করেছে,আর আমিই কি ভাবে রং তামাশা করে বেড়াবো,তবে হা নিজেকে বন্দী রাখতে রাখতে একটা সময় সত্যিই আমার দেমাগে প্রেসার আসতে থাকে,সব জায়গায় হোনাকে দেখতে আরম্ভ করি,আমার হিতাহিত জ্ঞান বলতে কোনো কিছুই ছিলো না,কিন্তু আজ এতদিন পর যখন বাহিরের পরিবেশ দেখলাম,নিজের ভেসভোসা ছেড়ে অন্য রূপে দেখছি নিজেকে,এখন সত্যিই মনে হচ্ছে আমি কতবড় পাগলামো করেছি....
--বাবা যা হয়েছে ভুলে যা,আর প্লিজ একটু নরমাল হওয়ার চেষ্টা কর,তোকে আমরা আবার আগের মত দেখতে চাই,আর তুই জানিস তোর মা রোজ কান্না করে তোকে দেখে,কত রাত না ঘুমিয়ে চোখের পানি দিয়ে বিছানা ভিজিয়েছে সেটা একমাত্র আমি জানি...
আকাশ-নাহ বাবা এবার আর কষ্ট দিব না আম্মুকে,আর একফোঁটা চোখের পানিও পড়তে দিব না আম্মুর চোখ থেকে,আমি আবার আগের মত হয়ে যাবো,আর আমি কাল থেকে তোমার যে কোনো একটা অফিসে জয়েন হবো ভাবছি...
--বাবা,এতটা খুশি লাগছে যে তোকে বলে বুঝাতে পারবো না,তোর যেই অফিসে ইচ্ছা হয় জয়েন কর,কাজ করতে ইচ্ছা না করলে করবি না,দরকার হয় আমার যত অফিস-আদালত আছে সব গুলাতে একদিন করে করে ঘুরে ঘুরে দেখবি...
কথাবার্তা বলে বাপ ছেলে দুজনেই ঘরে চলে যায়,আকাশের আম্মু তো খুশিতে কান্না করে দেয়,যে তিনার ছেলে আবার আগের মত হয়ে ফিরে এসেছে,তিনি খুশিতে আকাশের গালে কপালে অনেকগুলো চুমু একে দেয়...
--বাসায় আজ আকাশের সমস্ত পছন্দের খাবার গুলো রান্না করা হয়,পরেরদিন সকাল বেলা সে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নেয়,কারন আজ থেকে সে তার বাবার অফিসে জয়েন করবে,পরে নাস্তা করে রেডি হয়ে বাবা-মা দুজনের পায়ে ধরে সালাম করে,পরে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়,
সবাই ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আকাশকে ওয়েলকাম করার জন্য,আকাশ অফিসে পৌঁছানার সাথে সাথেই সবাই তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে ওয়েলকাম জানায়,পরে আকাশকে তার কেবিন দেখিয়ে দেওয়া হয়,ম্যানাজার মোটামুটি আকাশকে সমস্ত কিছু বুঝিয়ে দেয়,আকাশ একটা জিনিস লক্ষ্য করে অফিসের সবাই মোটামুটি মিশুক,নাহ এই অফিসেই থেকে যাবো,অন্য অফিসে আর যাবো না,সারাদিন অফিসেই কাঁটায়,প্রথমদিন তাই কাজের আগা মাথা বুঝে আসছে না,তাও যতটুকু পারে করে আজকের মত বাসায় চলে আসে,
--কিরে বাবা অফিস কেমন লাগলো?
--আকাশ,আম্মু অনেক ভালো লেগেছে,আমি এই অফিসেই থেকে যাবো,অফিসের সবাই মোটামুটি মিশুক....
--আচ্ছা,তোর যা ভালো লাগে কর..
আকাশ,রীতিমতো প্রতিদিন অফিসে সময় দিতে থাকে,এতদিন অফিসের বস ছিলো না,তাই কোনো এসিস্ট্যান্ট ও ছিলো না,আকাশ অফিসে যাওয়ার পর থেকে নুসরাত নামের একটা মেয়েকে আকাশের এসিস্ট্যান্ট নিযুক্ত করা হয়,মেয়েটা বেশ ভদ্র,আচার ব্যবহার ও সুন্দর,নুসরাত এক দিনেই আকাশের সাথে ভাব জমিয়ে ফেলে,আকাশ ও আর দ্বিমত করেনি,কারন সে তো আকাশের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট,ওকে এড়িয়ে চললে কি ভাবে কাজ হবে...
--অফিস শেষ করে বিকাল বেলা বাসার দিকে রওনা হয় আকাশ,জ্যামে আটকে আছে গাড়ি,এমন সময় আকাশের নজর পরে একটা গাড়ির মধ্যে,যেখানে পিছনের সিটে আরুর মত কেউ একজন বসে আছে,আকাশ প্রথমে থতমত খেয়ে যায়,এটা কি আরু না অন্য কেউ,আকাশ একটু ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে হা এটা তো আরু এই,আকাশ গাড়ি থেকে নেমে গাড়িটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,এমন সময় জ্যাম ছেড়ে দেয়,আর গাড়িটা টান দিয়ে চলে যায়,
আকাশ,তাড়াতাড়ি করে নিজের গাড়িতে ফিরে আসে,কিন্তু তত সময়ে সে চলে গেছে,আকাশ পরে নিজের বাড়িতে ফিরে আসে,
আকাশের কোনো মতেই হিসেব মিলছে না,হুট করে আজ থেকে ছয়মাস আগে আরু কোথায় চলে গেছে,কোনো যোগাযোগ নাই কিচ্ছু নাই,মেয়েটা আমার সাথে সমস্ত যোগাযোগ অফ কেন করে দিলো,হাজারটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,ধুর আজ ওর সাথে কথা বলতে পারলেই সবটা ক্লিয়ার হয়ে যেতো,তবে এত কিছুর ভিড়ে সে হেনাকে ভুলতে পারে নি,যত যাই হোক মনের কোনো এক কোণে হেনার জন্য জাগয়া রয়ে গেছে,একাকিত্ব সময় গুলো হেনার সৃতি তাকে কাঁদায়,
বাসার এসে দেখে ওর আব্বু-আম্মু ওর বিয়ের আলাপ করছে,যে এবার ছেলেটাকে বিয়ে করিয়ে দেওয়া উচিৎ,ছেলেটা আর কত একা থাকবে,তার চেয়ে বড় কথা আমাদের ও তো নায় নাতনির মুখ দেখতে ইচ্ছে হয়...
--আকাশের আব্বু,আকাশ এদিকে আয়?
আকাশ,হা আব্বু বলো..?
--আমরা চাচ্ছি এবার ঘরে বউমা আনবো?
আকাশ,বাবা এই বিষয় নিয়ে আমার কোনো মতামত নাই,তোমাদের যা ভালো লাগে করো,আমি তোমাদের মতের উপরে যাবো না,তবে আমাকে আরো কিছুটা সময় দিতে হবে.?
--আচ্ছা সময় নে,কিন্তু আমরা মেয়ে ঠিক করে রাখছি এখন,তোর যখন সময় হবে বলবি,তখন এই তোর বিয়ে করাবো....
আকাশ,নিজের রুমে চলে যায়,আকাশের কোনো ইচ্ছায় নাই বিয়ে করার,কারন সে যাকে আপন করতে চায় সে তার থেকে আরো বেশি দূরে চলে যায়,আজ বিয়ে করে ঘরে বউ আনবে,কিন্তু পরে যখন তার উপরে মন বসবে তখন সেও দূরে সরে যাবে,এসব নিয়ে ভাবছে এমন সময় রফিক ভাই ফোন করে বলে স্যার কালকে চট্টগ্রামে মিটিংয়ে যেতে হবে,একটু আগে যদি অফিসে আসতেন আপনি..?
রফিক হচ্ছে অফিসের ম্যানাজার...
আকাশ,আচ্ছা সমস্যা নেই,আমি আগেই চলে আসবো..
--স্যার একদিনে হয়তো আশা যাবে না,আপনি একদিনের প্লান করে বাসা থেকে আসবেন প্লিজ..?
আকাশ,ওকেহ,বলে ফোন রেখে দেয়,পরেরদিন তাড়াতাড়ি করে উঠে নাস্তা করে নেয়,আর ওর আব্বুকে বলে আজ চট্টগ্রাম যেতে হবে অফিসের মিটিংয়ের জন্য,আজ হয়তো বাড়ি ফিরবো না,বাড়ি ফিরতে হয়তো কাল হবে..
--আচ্ছা সমস্যা নেই,সাবধানে যেও...
আকাশ,সাথে করে একসুট কাপড় ব্যাগে করে নিয়ে অফিসের জন্য রওনা দেয়,১০ টার ফ্লাইটে তারা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে,আকাশের সাথে যাবে নুসরাত,আকাশ অফিসে এসে ফাইল গুলো একবার দেখে নেয়,তারপর যাত্রা করে চট্টগ্রামপর উদ্দেশ্যে,২ টায় মিটিং,তারা বিমানে করে যাওয়ায় ১২ টার মধ্যেই পৌঁছে যায়,
হোটেল আগে থেকেই বুক করা আছে,তাই তারা সোজা এসে হোটেলে উঠে,এই হোটেলেই মিটিং হবে,পরে তারা কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে দুইটা বাজে মিটিং করে,ওদের সাথে ডিল কনফার্ম,
পরে চারটায় মিটিং শেষ হয়...
এরপর কি করবে,হোটেল বসে বসে বোরিং লাগছে,এই নুসরাত চলো সমুদ্র সৈকত থেকে ঘুরে আসি,
--নুসরাত,স্যার চলেন,আমারো অনেক দিনের ইচ্ছা সমুদ্র সৈকত দেখবো,পরে দুজনে মিলে সমু্দ্র সৈকত দেখতে বের হয়,
নুসরাত তো সমুদ্র দেখতে পেয়ে সে পানিতে নেমে পড়ে,সে তো মহাখুশি,অন্যদিকে আকাশ চুপচাপ একটা পাথরের উপরে বসে আছে,আর সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছে,এমন সময় পাশে অনেক চেঁচামেচির আওয়াজ কানে আসে,আকাশ লক্ষ্য করে অনেক গুলো মানুষ জড়ো হয়ে হৈ-হুল্লোড় করছে,আকাশ ও দৌড়ে যায় কি হয়েছে সেটা দেখার জন্য,একজন থেকে জিগ্যেস করলে যে ভাই কি হয়েছে...?
সে বলে ভাই মাইয়া পুয়া ওগ্গো মাথা ঘুরিয়েরে পড়ি গেইয়ি,চিটাগাং এর ভাষায়,মানে মেয়ে একটা মাথা ঘুরে পড়ে গেছে,
আকাশ,মানুষজন ঠেলে সামনে এগিয়ে যায় মেয়েটাকে দেখার জন্য,
সে যা দেখে তার তো কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে,আকাশের চোখ বড় বড় হয়ে যায়,বেহুশ হওয়া মেয়েটাকে দেখে,সে দেখতে পায় হেনা বেহুশ হয়ে মাটিতে....
.
চলবে...

No comments