Breaking News

ওসির অহংকারী মেয়ে । পর্ব -১৫

আকাশ,লক্ষ্য করে অনেকগুলো মানুষ জড়ো হয়ে হৈ-হুল্লোড় করছে,সেও দৌড়ে যায় কি হয়েছে সেটা দেখার জন্য,একজন থেকে জিগ্যস করলে যে ভাই কি হয়েছে..?

--সে বলে ভাই মাইয়া পুয়া ওগ্গো মাথা ঘুরিয়েরে পড়ি গেইয়ি,চিটাগাং এর ভাষায়,মানে মেয়ে একটা মাথা ঘুরো পড়ে গেছে,
আকাশ,মানুষজন ঠেলে সামনে এগিয়ে যায় মেয়েটাকে দেখার জন্য,সে যা দেখে তার তো কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে,আকাশের চোখ বড় বড় হয়ে যায় বেহুশ হওয়া মেয়েটাকে দেখে,সে দেখতে পায় হেনা বেহুশ হয়ে মাটিতে পড়ে আছে,আকাশের তো মাথায় এই কাজ করছে না,হেনা জীবিত হলো কি করে,সে তো মারা গিয়েছে,ওর লাশকে আমি আকাশ ঝাপটে ধরে কান্না করেছি,ইম্পসিবল মরা মানুষ জীবিত হয় কি করে,নাহ আমার কি কোথায় ভুল হচ্ছে,সে নিজেকে চিমটি দিয়ে দেখে,নাহ সে ব্যথা অনুভব করছে,তার মানে কি হেনা জীবিত,তাও আবার আমার চোখের সামনে,
--সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখছে,কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে না...
আকাশ,এই ভাই আপনারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছেন,প্লিজ আমার সাথে কেউ একটু হেল্প করুন,আমি মেয়েটাকে হসপিটালে নিয়ে যাবো..
--একজন বলে উঠে ভাই আপনি কি মেয়েটাকে চিনেন ?
আপনার রিলেটিভ এমন কিছু হয় নাকি...?
আকাশ,বেশি কিছু বলবো না,শুধু এটাই বলবো ওর সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক,এবার বুঝে নেন ওকে আমি চিনি কি চিনি না...
আকাশ,হেনাকে কোলে করে তুলে নিয়ে একটা সিএনজি দাঁড় করায়,এই ভাই আসেপাশে কোনো হাসপিটাল থাকলে প্লিজ ইমারজেন্সী আমাকে নিয়ে চলুন,
--ড্রাইভার চিটাগং সাউদান মেডিকেল কলেজের সামনে দাঁড় করায় গাড়ি,
আকাশ,ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে হেনাকে কোলে করে নিয়ে হসপিটালের ভিতরে ঢুকে,আকাশ নার্স একজনকে দেখতে পেয়ে এই যে সিস্টার প্লিজ একটু দেখুন তো ওর কি হয়েছে?
--নার্স, ওয়ার্ডবয় একজনকে ডেকে হেনাকে কেবিনে শিফট করায়,
আকাশ,পাশেই একটা চেয়ারে বসে আছে,একটু পর নার্সটা কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে,আপনি প্লিজ চিন্তা করবেন না,উনার কিছু হয়নি,যাস্ট মাথা ঘুরে পড়ে বেহুশ হয়ে গিয়েছে,অনেকদিন ধরে হয়তো খাওয়া দাওয়া প্লাস ঘুম কোনোটাই উনি ঠিক মতন করেন না,তাই শরীর দূর্বল হয়ে আছে,সেই জন্য মাথা চক্কর দিয়ে পড়ে গেছেন..
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা উনাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি ৬ ঘন্টার জন্য,৬ ঘন্টা হলেই উনার জ্ঞান ফিরে আসবে,আপনি একদম চিন্তা করবেন না,আর আপনি চাইলে কেবিনে যেতে পারেন,
তারপর নার্স চলে যায়...
আকাশ,কেবিনের বাহিরে চেয়ার দখল করে বসে আছে,ভাবছি কেবিনের ভিতরে যাবো,অনেকটা সময় তো বাহিরে বসে রইলাম,এবার গিয়ে মেয়েটাকে এক নজর দেখে আসি,কিন্তু এমন সময় ফোনটা বেজে উঠে,ফোনটা হাতে নিতেই মাথার টনক নড়ে উঠলো,নুসরাতের ফোন,ওহহহ শিট ম্যান মেয়েটার কথা তো একদম ভুলেই গেছি,মেয়েটাকে যে একা ফেলে রেখে চলে এসেছি,সেটা আমার মাথায় এই ছিলো না,
--নুসরাত,স্যার আপনি কোথায় কান্নার সুরে..?
আপনি আমায় একা ফেলে রেখে কোথায় চলে গেছেন,স্যার প্লিজ আমার খুব ভয় করছে,প্লিজ আপনি তাড়াতাড়ি আসুন..
আকাশ,বুঝতে পেরেছে মেয়েটাকে একা ফেলে রেখে চলে এসেছে,তাই সে ভয়ে কান্না করে দিয়েছে,এই তুমি এখন কোথায়..?
নুসরাত,স্যার রুম আটকে হোটেলের ভিতরে বসে আছি,প্লিজ আপনি তাড়াতাড়ি আসুন,আমার খুব ভয় করছে স্যার,কখন কে আমার সাথে কি করে বসে...
আকাশ,আরে পাগলী মেয়ে তুমি এত ভয় পাচ্ছো কেন,তোমার কেউ কিচ্ছু করবে না,আমি আর অল্প সময়ের মধ্যেই চলে আসবো...
নুসরাত,না স্যার প্লিজ আপনি এখনি আসুন...😥
আকাশ,প্লিজ এমন করো না,আমি কিছু সময়ের মধ্যেই চলে আসবো,খুব দরকারী একটা কাজে আঁটকে পড়েছি...
নুসরাত,আচ্ছা স্যার আমি দরজা লক করে বসে আছি,আপনি আসলেই খুলবো,তাড়াতাড়ি চলে আসবেন কিন্তু প্লিজ স্যার?
আকাশ,আচ্ছা,তারপর ফোন কেটে দেয়,রাত ১১ টা বাজে হেনার জ্ঞান ফিরে আসার সময় হয়েছে,এতটা সময় সে হেনার পাশেই বসে ছিলো,এমন সময় আকাশের আম্মু ফোন দেয়,আকাশ কথা বলার জন্য কেবিন থেকে বের হয়ে হসপিটালের এক কোনায় চলে যায়...
--আকাশের আম্মু,বাবা কেমন কাটলো তোর দিন..?
আকাশ,আম্মু ভালো খারাপ মিলিয়ে,আর একটা গুড নিউজ আছে সেটা পরে বলবো,এখন একটু তাড়াহুড়োয় আছি,পরে কথা বলবো,নিজের খেয়াল রেখো বলে ফোনটা কেটে দেয়,মেয়েটার হয়তো জ্ঞান ফিরে এসেছে এত সময়ে,নাহ কেবিনে যাওয়া দরকার,আকাশ কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখে হেনা নাই,আকাশ পুরো কেবিন খোজ করে কিন্তু হেনাকে সে কোথাও দেখতে পায় না,
আকাশের তো চোখের পানি টলমল করছে,একবার হেনাকে হারিয়েছি নিজের দোষে,এবার ও কি ওকে হারিয়ে ফেললাম,আকাশ হটাৎ লক্ষ্য করে হেনা বেডে যেখানে শুয়ে ছিলো সেখানে একটা সাদা কাগজ,সে কাগজটা হাতে নিয়ে ভাজ খুলে দেখে কিছু লিখা আছে,সে লেখাটা পড়তে আরম্ভ করে, কলিজা প্লিজ আমায় মাফ করে দাও,আমি তোমার বিশ্বাস রাখতে পারি নি,আর আমি চলে যাচ্ছি,আমার জ্ঞান অনেক আগেই ফিরে এসেছে,সুধু সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম যে তুমি কখন কেবিন থেকে বের হবে,আর আমি সেই সুযোগে চলে যাবো,প্লিজ আমার খোঁজ করো না,আমি ধোঁকাবাজ একটা মেয়ে,তোমার জীবনে আমার থেকেও হাজারগুন ভালো মেয়ে আসবে,
ভালো থেকো...
আর কিছু লিখা নাই,
আকাশ ধাপাসসস করে মাটিতে বসে পরে,তার এখন কি করনীয় সেটাই মাথায় কাজ করছে না,হেনা আমার থেকে দূরে চলে যেতে কেন চাইছে,এমনটাই যদি হতো তাহলে শুরুতে সে আমায় ওর ভালোবাসায় কাবু কেন করলো,
ওর যদি দূরে সরে যাওয়ার এই নিয়ত থাকতো তাহলে আমায় ভালোবেসেছিলো কেন,হাজারটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,তার উপরে আরুর কোনো খোঁজ নাই আজ ছয়মাসের উপরে,সে আমার এত ভালো বন্ধু ছিলো,কিন্তু হটাৎ কি এমন হলো যে সে আমার থেকে দূরে সরে গিয়েছে,নাহ ঘটনা তো কিছু একটা আছে,এর ভিতরের রহস্য কি সেটা আমার বের করতে হবে,আসল মারপেঁচটা কোথায় সেটা আমি বের করেই ছাড়বো...
তারপর
আকাশ,হোটেলে ফিরে আসে,রুমের দরজায় বাড়ি দিতেই নুসরাত দরজা খুলে দেয়,কারন আকাশ আসার সময় ফোন করে দিয়েছে সে আসছে,
নুসরাতের চোখ মুখ লাল হয়ে ফুলে আছে,আকাশ দেখেই বুঝতে পারে যে মেয়েটা অনেকটা সময় ধরে কান্না করেছে,তাই তার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে ফুলে,নুসরাত আকাশকে দেখতে পেয়ে বিছানা থেকে নেমে আসে,
আকাশ,এই মেয়ে কি হাল করেছো চেহারার?
নুসরাত,খপপপ করে আকাশের কলার ধরে ফেলে,এই কুত্তা,বিলাই,খাটাশ,উল্লুক তুই আমাকে একা রেখে কোথায় গিয়েছিলি হা..?
তুই জানিস আমার কত ভয় লাগছিলো,কেউ যদি আমার সাথে কিছু করে বসতো বলে আবার কান্না শুরু😭
আকাশ,তো থথথ.... আল্লাহ এই মেয়ে করছে টা কি,একে তো কলার ধরেছে,দুই আবার তুই তুকারিও করছে,ওর মাথা মনে হয় নষ্ট হয়ে গেছে,কাকে কি বলছে ওর মধ্যে কোনো হিতাহিত জ্ঞান নাই...
এই প্লিজ প্লিজ কান্না থামাও,সত্যি অনেক জরুরী একটা কাজে গিয়েছিলাম😶
নুসরাত,এই কুত্তা তুই এমন কি কাজে গিয়েছিলি যে আমায় সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পাড়লি না,একটা অবলা মেয়েকে এভাবে রেখে চলে গেছিস কুত্তা কোথাকার...
আকাশ,প্লিজ নুসরাত তুমি শান্ত হও,আমি জানি তোমার মাথা ঠিক নেই,
নুসরাত,এই তোর মাথা ঠিকের গুষ্টি মারি,তুই আমাকে এত সময় কাঁদিয়েছিস,এখন তোকে আমি শাস্তি দিব,তুই মাথা নিচু কর..?
আকাশ😩
নুসরাত,এই উল্লুক তোকে মাথা নিচু করতে বলেছি...?
আকাশ,এই এই রেগে যাচ্ছো কেন,করছি করছি..
নুসরাত,আকাশ মাথা নিচু করলে ওর চুল গুলা মুঠো করে ধরে টানতে থাকে,
আকাশ,তো ব্যথায় শেষ,প্লিজ নুসরাত ছেড়ে দাও খুব লাগছে,
নুসরাত,আকাশকে ছেড়ে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে,স্যার প্লিজ আমায় আর কখনো একা রেখে যাবেন না,আমার একা একা খুব ভয় করে,নুসরাত নাক টেনে টেনে কান্না করতেছে...
আকাশ,কি বলবে কিছুই মাথায় কাজ করছে না,মেয়েটার হিতাহিত জ্ঞান নাই,তাই সে আমায় জড়িয়ে ধরেছে,সে হয়তো জানেই না সে কেমন ধারা আচরণ করছে,আর আমি যে তার অফিসের বস সেটা সে ভয়ের সাথে গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছে,কিন্তু আকাশের চরম লেভেলের হাসি পাচ্ছে নুসরাতের নাক টেনে কান্না করা দেখে,এই মেয়ে হয়েছে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো পরে আমি যাবো,আমি আসার সময় খাবার ওর্ডার করে দিয়ে এসেছে,এখন হয়তো খাবার দিয়ে যাবে,
নুসরাত,লক্ষ্যি মেয়ের মতন ফ্রেশ হতে চলে যায়,
--দুজনেই ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নেয়,একই রুমে দুইটা বেডরুম,একটাতে নুসরাত আরেক টাতে আকাশ শুয়ে আছে,এতকিছুর ভিড়েও আকাশ কোনো ভাবে হেনাকে ভুলতে পারছে না,নাহ কিছু একটা করতে হবে,
হেনা হয়তো এই শহরেই থাকে,আকাশ সিদ্ধান্ত নেয় সে আরো কয়েকদিন চিটাগাং শহরে থাকবে,যে করেই হোক হেনাকে সে খুজে বের করবে,
কিন্তু কি করে খুজবে এত বড় শহর,তখনি তার মাথায় আসে হেনার আব্বুর কথা,হেনার আব্বু তো ওসি,তিনি একটা না একটা থানায় তো অবশ্যই পেশাগত আছে,আর হেনাকে যেহেতু এই শহরে দেখেছি,তার মানে ওর বাবাও এই শহরের যে কোনো একটা থানার ওসি...
আকাশ,রানাকে ফোন করে,এই রানা চিটাগাং শহরের যতগুলো থানা আছে,সব গুলো থানার অফিসার পদে যারা যারা আছে,তাদের ছবি সহ ডিটেইলস চাই..?
রানা,ওকে ভাই কাল সকালের মধ্যেই পেয়ে যাবেন!
আকাশ,আর কাল সকালে আমাদের যত পরিচিত মানুষ আছে চট্টগ্রামে সবাইকে একটা জায়গায় মিটাপ করতে বলবি আমার সাথে,জায়গার ঠিকানা টেক্সট করে দিচ্ছি,
রানা,আচ্ছা ভাই...
তারপর
আকাশ,ফোন কেটে দেয়,সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার আগেই হোটেলের একটা বয় এসে খাবার দিয়ে যায় সাথে একটা ফাইল ও দিয়ে যায়,
আকাশ,ফ্রেশ হয়ে এসে ফাইলটা ঘাটতে আরম্ভ করে,ফাইলটা রানা পাঠিয়েছে লোক দিয়ে,আকাশ একটা একটা করে কাগজ আর ছবি ঘেটে ঘেটে দেখছে,কাগজের মধ্যে অফিসারদের সমস্ত তথ্য আছে,হুট করে হেনার আব্বুর কাগজটা সামনে চলে আসে,কাগজের উপরে হেনার আব্বুর ছবি,আকাশ একবার দেখেই চিনতে পেরে যায় যে এটা হেনার আব্বু,সকাল বেলা নুসরাতকে বলে তুমি থাকো আমি একটা কাজে যাচ্ছি,আর তোমার সাথে দুইটা মেয়ে সব সময় থাকবে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই,
নুসরাতকে রেখে সে বের হয়ে যায়....
আকাশ,সিএনজি নিয়ে অক্সিজেন চলে যায়,সেখানে রানার সমস্ত ছেলেপেলে অপেক্ষা করে আছে আকাশের সাথে মিটাপ করতে,আকাশ ওদের সাথে মিটাপ করে,তারপর সব কয়টাকে নিয়ে কাগজের ঠিকানা মত চলে যায়,আকাশ সবাইকে বাহিরে থাকতে বলে,সে একাই থানার ভিতরে ঢুকে,ভিতরে ঢুকেই দেখে হেনার আব্বু চেয়ারের উপরে বসে আছে,
হেনার আব্বু আকাশকে দেখতে পেয়ে থতমত খেয়ে যায়,কলিজার পানি যেনো সব শুখিয়ে গেছে ওসির,এখনি যেনো দম আটকে মারা যাবে,
আকাশ,কোনো কথা ছাড়াই ঠাসসসসসসস করে ওসির গালের মধ্যে থাপ্পড় লাগাই দেয়....
থানার সবাই তো থথথথথ হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে...
এই এলকায় ওসিকে ভয় পায় না এমন কেউ নাই,আর থানার লোকেরা তো বাঘের মত ভয় পায় ওসিকে,কারন এলকায় এসে অনেক গুন্ডা বদমাইশকে সে মেরে সোজা করে ফেলেছে,আর সেই ওসিকেই থাপ্পড় মারলো এই ছেলে,
আকাশ,এই ওসি হেনা কই তাড়াতাড়ি বল..?
না হলে তোর লাশ বের হবে আজ এই থানা থেকে...
ওসি,সাথে সাথে ঝাপটি খেয়ে আকাশের পায়ে পড়ে যায়....
আকাশ ভাই আমাকে মাফ করে দেন...
.
চলবে...?

No comments